অ্যাপ তৈরি করে গুগল প্লে স্টোর থেকে আয়
, গুগল প্লে স্টোর থেকে আয় করা যায়। হয়তো, আয় করার উপায়টি জানেন না। আজকাল সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুচি-বোধের পরিবর্তন ঘটেছে। মানুষ এখন গতানুগতিক ধারায় চাকুরীর পেছনে না ছুটে, ঘরে বসে আয়ের স্বপ্ন দেখে।
ঘরে বসে নিজের পছন্দমতো সময়ে অনলাইনে আয় করা যায় বলে, আজকাল মানুষ ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে অনলাইন আয়কে প্রাধান্য দিচ্ছে। আপনিও ক্যারিয়ার গড়তে পারেন এই খাতে। তবে, জেনে বুঝে নিজের পছন্দমতো কাজের ক্ষেত্র বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
অনলাইনে আয়ের অনেক ধরনের উপায় রয়েছে। তেমনি একটি হল গুগল প্লে স্টোর থেকে আয়। আজ আমি আলোচনা করব কিভাবে আপনি, গুগল প্লে স্টোর থেকে আয় করতে পারবেন।
গুগল প্লে স্টোর থেকে আয়
মোবাইল অ্যাপ বর্তমান সময়ে টাকা আয়ের সবচেয়ে ভালো একটি মাধ্যম হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে আমাদের সকলের সামনে। প্রায় সকল ধরণের অ্যাপ থেকে কিন্তু আয় করা যায় না। তাই, কোন অ্যাপ থেকে আয় করা যাবে তা সম্পর্কে পুরোপুরি জেনে তবেই কাজ শুরু করবেন।
- আরও পড়ুন: গুগল থেকে আয় করার ৬টি সহজ উপায়।
প্রতিদিনই নতুন নতুন মোবাইল অ্যাপ বাজারে আসছে। প্রায় সব ধরণের অ্যাপ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে একটি সাধারণ প্রশ্ন সকলের মাথায় ঘুরে তা হল যে, এই অ্যাপ থেকে কি টাকা আয় করা যাবে? কিংবা কিভাবে গুগল প্লে স্টোর থেকে আয় করা যাবে?
তাই এই প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার পূর্বে একটি সাধারণ সমীক্ষার সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া উচিত। গুগল প্লে স্টোর থেকে শুরু করে এপল অ্যাপ স্টোরে সাড়ে চার মিলিয়ন অ্যাপ মজুদ রয়েছে।
এছাড়াও, প্রতিদিনই এক বা একাধিক অ্যাপ বাজারে আসছে। তো, এতসব অ্যাপ বানিয়ে তারা কি মন্টু মামার চায়ের দোকানে বসে চা খেয়ে জীবন পার করে দেয়! আসলে তা কিন্তু নয়! বরং, এই অ্যাপ থেকে তাদের হিউজ পরিমান ইনকাম হয়। ডেভেলপারগণ যেকোনো ধরণের অ্যাপ তৈরির আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখে।
অ্যাপ তৈরির আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে?
অ্যাপের উদ্দেশ্য
অ্যাপ তৈরির ক্ষেত্রে সবার আগে আপনার অ্যাপ তৈরির ধরনের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। যখন আপনি অ্যাপ তৈরির ক্ষেত্রে, কিভাবে টাকা আয় করা যায় তা লক্ষ্য রেখে অ্যাপ তৈরি করবেন, তখন অ্যাপের উদ্দেশ্য এমনিতেই প্রতীয়মান হবে।
যখন উদ্দেশ্য প্রতীয়মান হবে তখন গ্রাহকদের এবং বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সফটওয়্যারটি ডেভেলপমেন্ট করা হবে। যখন আপনার ধারণা স্পষ্ট হবে তখন আপনি আপনার অ্যাপের একটি সঠিক উদ্দেশ্য বুঝতে পারবেন।
- আরও পড়ুন: ভিডিও দেখে টাকা ইনকাম করার ৫টি উপায়।
এই যেমন ধরুন, আপনি নিউজ অ্যাপ বানাতে পারেন, সেখানে অ্যাড দেখিয়ে টাকা আয় করতে পারেন। বিভিন্ন টুলসের অ্যাপ যেমন, ছবি এডিট, ভিডিও এডিট, গেমস তৈরি করে বিক্রি করা কিংবা অ্যাড দেখিয়ে গুগল প্লে স্টোর থেকে আয় করতে পারেন।
ব্যবহারকারী টার্গেট
যেকোনো অ্যাপ তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী কারা, সেই সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা রাখা প্রয়োজন।
- যদি আপনি ব্যবসায়ের কাজের জন্য অ্যাপ তৈরি করে থাকেন তাহলে, আপনাকে এমন অ্যাপ তৈরি করতে হবে যা পরিপূর্ণ ব্যবসার কাজের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।
- আবার যখন অ্যাপটি আপনি বাচ্চাদের উদ্দেশ্য বানাবেন তখন তা হয়ে থাকে পরিপূর্ণ ফ্রি একটি অ্যাপ।
- আপনি যদি টাকা আয়ের জন্য কোন অ্যাপ তৈরি করে থাকেন তখন অবশ্যই আপনাকে আপনার টার্গেট অর্ডিয়েন্স কে হবে সেই সম্পর্কে নজর দিতে হয়ে।
- কে হতে পারে আপনার অর্ডিয়েন্স?
- আর কি হতে পারে তাদের চাহিদা?
- কি পরিমাণ অর্থ আপনি গুগল প্লে স্টোর থেকে আয় করতে পারবেন?
এইসকল বিষয় মাথায় রেখে আপনাকে কাজে নেমে পড়তে হবে।
অন্যান্য প্রতিযোগিদের সাথে তুলনা
যখন কোন অ্যাপ তৈরি করা হয়, তখন আশেপাশের প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের অ্যাপের দিকে নিজর রাখতে হবে। অ্যাপ থেকে আয়ের ক্ষেত্রে তারা কি ধরণের সুবিধা গ্রাহকদের দিয়ে থাকে তা অনুসরণ করতে হবে।
প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের তুলনা শুধুমাত্র পণ্যসমূহ হাইলাইট করা, অ্যাপের সুবিধাদি কিংবা ডিজাইনের জন্য করা হয় না। বরং প্রতিযোগী কোম্পানির পণ্যসমূহ নিয়ে যত বেশি আলোচনা হবে, নিজের প্রতিষ্ঠানের পণ্যসমূহের সমস্যা সমূহ সামনে এসে ধরা দিবে।
তবে সবার আগে কিছু প্রশ্ন নিজের জন্য রেখে দিতে হবে যেমন:
- কি করে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহ আয় করছে?
- তাদের তৈরিকৃত মডেল কতটুকু সঠিক?
- তাদের তৈরিকৃত পণ্য সমূহের এমন কি ধরনের অসুবিধা রয়েছে, যা আপনাকে সুযোগ তৈরি করে দিতে সক্ষম হবে?
প্রযুক্তিগত জ্ঞান
প্রযুক্তিগত জ্ঞান আপনাকে আপনার পণ্য সমুহ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা, প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় নিজের পণ্যকে উন্নত করতে সহযোগিতা করবে এবং সেই সাথে গুগল প্লে স্টোর থেকে আয় করতে সাহায্য করবে।
উদাহরণস্বরূপ, একটি ট্রেডিশনাল মোবাইল অ্যাপ থেকে ডেভেলপাররা শুধুমাত্র, ৭০% টাকা আয় করে থাকে। অন্যদিকে ব্ল্যাক চেইন ডেভেলপার ৮৫% লভ্যাংশ শেয়ার করে থাকে।
গুগল প্লে স্টোর থেকে আয় করার উপায়
১. মোবাইল অ্যাপ মনিটাইজেশন
গুগল প্লে স্টোর থেকে আয় করার সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয় মাধ্যম। অধিকাংশ অ্যাপ ডেভোলপাররা এইভাবেই ইনকাম করে থাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশের অ্যাপগুলো। অ্যাপের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের প্রচারের ধরণ বিভিন্ন হয়ে থাকে, যেমন: পপ আপ অ্যাড, ব্যানার বিজ্ঞাপন, ভিডিও বিজ্ঞাপন ইত্যাদি।
যখন মনিটাইজেশন থেকে অ্যাপের মাধ্যমে আয়ের কথা আলোচনায় আসে তখন ২ ধরণের বিষয় আলোচনা করা হয়।
- মোবাইল অ্যাপের লভ্যাংশ সমানভাবে ভাগ করতে হয়।
- মাসিক একটি সাবস্ক্রিপশন ফি ধার্য করতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ আবহাওয়া সংক্রান্ত অ্যাপগুলো, আয়ের ক্ষেত্রে মনিটাইজেশন মডেলকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
অ্যাপ মনিটাইজেশন করার ওয়েবসাইট:
২. অ্যাপ বিক্রি ও ইন অ্যাপ পারচেস
একটা হল, অ্যাপ ইন্সটল করার জন্য, গ্রহককে আগে পেমেন্ট দিয়ে নিতে হবে এটা হল অ্যাপ বিক্রি। আরেকটি হল, ফ্রিতে কয়েকদিন ব্যবহার করতে হবে, তারপর টাকা দিতে হবে। অথবা, কিছু বিশেষ ফিচার ব্যবহার করতে হলে টাকা দিতে হবে। এই স্ট্রাটেজিকে বলে ইন অ্যাপ পারচেস।
- আরও পড়ুন: ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়।
সকল মোবাইল অ্যাপ মনিটাইজেশন করার ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বিষয় অনুসরণ করে চলতে হবে। কোন অ্যাপের ক্ষেত্রে যদি বিনামূল্যে ছাড়া হয়, তার ডাউন লোড সংখ্যা এবং সেই সাথে বিজ্ঞাপন সংখ্যার উপর নির্ভর করে অ্যাপ মার্কেটে রেংক করা হয়।
অ্যাপ সমূহ যখন বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। তখন ব্যবহারকারীকে অ্যাপের ভার্চুয়াল কিছু উপাদান ব্যবহার করার জন্য টাকা প্রদান করতে হয়। এর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে অতিরিক্ত লাইফ, এড ব্লক, ফ্রীনিয়াম এপ কন্টেন্ট, গেইম কারেন্সিসহ আরও অনেক কিছু।
এই রকম স্ট্রাটেজি ব্যবহার করে, ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানস নামক গেইম প্রতিদিন প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে।
৩. সাবসক্রিপশন
অ্যাপ ব্যবহারকারীরা সাপ্তাহিক, মাসিক এবং বাৎসরিক হিসেবে চার্জ দিয়ে থাকে। এই স্ট্রাটেজি সাধারণত ক্লাউড ভিত্তিক অ্যাপে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই যেমন, অডিও কিংবা ভিডিও কন্টেন্ট হিসেবে স্পোটিফাই, গুগল মিউজিক এবং নেটফ্লিক্স এই স্ট্রাটেজি ব্যবহার করে।
৪. স্পন্সরশীপ
মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে আয়ের অন্যতম মাধ্যম হল স্পন্সরশীপ। আপনার অ্যাপের ডাউনলোড এবং ইন্সটল যখন অনেক বেশি হবে, তখন অনেক বড় বড় কোম্পানি তাদের সেবার বিজ্ঞাপন বা স্পন্সর দিতে বলবে। গুগল প্লে স্টোর থেকে আয় করার এটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
৫. ক্রাউডফান্ডিং
ক্রাউডফান্ডিং একটি বিকল্প ফান্ডিং অ্যাপ হিসেবে গৃহীত। এটি বিনামূল্যে ব্যবহৃত এপসমূহ থেকে টাকা আয়ের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হিসেবে গৃহীত হয়।
- আরও পড়ুন: ছাত্রদের জন্য অনলাইনে আয় করার ১০টি উপায়।
এর মাধ্যম আপনি আপনার অ্যাপের আইডিয়া শেয়ার করে বিভিন্ন মাধ্যমে পাবলিশ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ ২০১৭ সালের দিকে হ্যালো আর্থ নামে একটি অ্যাপ মনিটাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অনুসরণ করে ১৪৮ ইউএসডি ডলার আয় করতে সক্ষম হয়।
৬. এফিলিয়েট লিংক
আপনি চাইলে আপনার অ্যাপে অ্যাফিলিয়েট লিংক যুক্ত করে আয় করতে পারেন। ধরুন, আপনার অ্যাপে আপনি অন্য একটা অ্যাপের ডাউনলোড লিংক যুক্ত করে দিলেন কিংবা পণ্যের লিংক যুক্ত করে দিলেন। এখন কোন অ্যাপ ব্যবহারকারী যদি সেই লিংকে ক্লিক করে ঐ অ্যাপটি কিনে তাহলে, আপনি কমিশিন পাবেন।
জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট সাইট:
Frequently Asked Questions (FAQs)
কোন ধরণের অ্যাপ সবচেয়ে বেশি লাভজনক?
মিউজিক, গেমিং, ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপে টাকা আয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি লাভজনক।
গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপ বিক্রির কমিশন কত?
প্রতিটি ডাউনলোডের ক্ষেত্রে ৩০% লভ্যাংশ রেখে বাকি ৭০% ডেভেলপারদের দিয়ে থাকে।
গুগল প্লে স্টোর থেকে আয়ে এর ভবিষ্যৎ কেমন?
অ্যাপের চাহিদা ভবিষ্যতে কমার সম্ভাবনা খুব কম। গেমিং অ্যাপ থেকে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করা গেলেও, সাধারণ অ্যাপ থেকে টাকা আয় করার পরিমান কিছুটা কম। অগমেন্টেড রিয়েলিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোনে যুক্ত হওয়ায়, মোবাইল অ্যাপ একচ্ছত্র আধিপত্য দখল করে রেখেছে।
পরিশেষে
আজকে এই ছিল গুগল প্লে স্টোর থেকে আয় করার সংক্ষিপ্ত লেখা। আপনি কোন সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়বেন তা সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু, আপনি যদি অনলাইনে আয় করতে চান, সেক্ষেত্রে যে সেক্টরে আয় করতে চান না কেন, অবশ্যই সেই সেক্টর সম্পর্কে পূর্ণ অভিজ্ঞতা জেনে নেওয়া উচিত।